জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সারাদেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ছাড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকায় দিনরাত মিলিয়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো এলাকায় ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় হওয়ায় ঢাকার আশপাশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। গ্রিডের সমস্যার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হলেও সব বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি। এ কারণে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঢাকার আশপাশের চারটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র আশুগঞ্জ, হরিপুর, ঘোড়াশাল ও সিদ্ধিরগঞ্জের একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সেগুলো দ্রুত চালু করতে প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। মূলত এজন্যই লোডশেডিং বেড়েছে।সব মিলিয়ে চাহিদার চেয়ে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। পিডিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের আগের দিন সম্ভাব্য চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আর সম্ভাব্য উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট। সম্ভাব্য লোডশেডিং ছিল ৯৭৯ মেগাওয়াট।জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পরদিন গত বুধবার (৫ অক্টোবর) সম্ভাব্য চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সম্ভাব্য উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৮০৮ মেগাওয়াট আর সম্ভাব্য লোডশেডিং ছিল এক হাজার ১৯২ মেগাওয়াট। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) অফিস-আদালত খোলা থাকায় চাহিদা বেশি ছিল। পিডিবি সম্ভাব্য উৎপাদনের যে তথ্য দেয় তার চেয়ে কম উৎপাদন হয়। গ্রিডে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করতে না পারায় বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং হয়।ডিপিডিসির বৃহস্পতিবারের সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের তালিকায় জুরাইন এনওসিএস এলাকায় ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল দেওয়া হয়। ফতুল্লা ও শীতলক্ষ্যা এনওসিএস এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের শিডিউল দেওয়া হয়। ডেসকোও তার আওতাধীন এলাকায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের জন্য ৩ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করে।তবে বৃহস্পতিবার ৫ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী, মিরপুর ডিওএইচএস, গুলশান, বসুন্ধরা, শ্যামপুর, ধানমন্ডি, সিদ্ধিরগঞ্জ, কল্যাণপুর, মানিকনগর ও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘এখন বিদ্যুৎ গেলেই মনে হয় জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় আবার হলো কি না। কারণ আগে লোডশেডিং হতো ৩০ মিনিট। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ গেলে আর আসে না। তাই বিদ্যুৎ গেলেই মনে পড়ে যায় ব্ল্যাকআউটের কথা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে সেই বিদ্যুৎ আসে দুপুর ১২টায়। ফের বেলা সাড়ে ৩টায় আবার লোডশেডিং হয়। এভাবে এখন প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে আমাদের।’ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী জানান, পরিস্থিতি বেশি ভালো না। ৪০০ থেকে ৪৪২ মেগাওয়াটের ঘাটতি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শুনেছি কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। সেগুলো চালু হলে এই সঙ্কট থাকবে না। আশা করছি আজ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘ডিপিডিসি এলাকায় চাহিদা ১৫০০ থেকে ১৫৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু ১১০০ মেগাওয়াটের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি কোনো এলাকায় যেন ২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং না হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর এখনো সব পাওয়ার প্লান্ট উৎপাদনে আসেনি। সে জন্যই ঘাটতি হচ্ছে।’লোডশেডিং বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ হোসাইন জানান, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে সময় লাগছে। এজন্য লোডশেডিং কিছুটা বেড়েছে।