মুসলমান মুমিনদের প্রধান শত্রু। কুরআনের অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ শয়তান সম্পর্কে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। তাকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।অভিশপ্ত হওয়ার আগে থেকেই শয়তান মানুষের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করতো। যখন সে জানতে পেরেছিল আল্লাহ তায়ালা একটি নতুন জাতি সৃষ্টি করছেন, যারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করবে এবং সৃষ্টির সবার ঊর্ধ্বে উঠে যাবে, তখন থেকেই মানুষের প্রতি শুরু হয় শয়তানে হিংসাত্মক মনোভাব।মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সেদজা না করে আল্লাহ তায়ালার হুকুমের প্রতি ঔদ্ধত্য দেখিয়ে এই মনোভাব প্রকাশ করে অভিশপ্ত শয়তান।কোরআনের এ ঘটনার বিবরণ এসেছে এভাবে, আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা মাটি থেকে। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হবে। তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদাবনত হল কেবল ইবলীস ব্যতীত। সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল। -(সোয়াদ, আয়াত, ৭১-৭৪)তিনি বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে? না তুমি উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে। তিনি (আল্লাহ) বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। -(সোয়াদ, আয়াত, ৭৫-৭৭)আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লানত স্থায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার সম্মানের শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে একনিষ্ঠ বান্দাদের নয়। তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য আর আমি সত্যই বলি। তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।’ -( সুরা, সোয়াদ, আয়াত, ৭৮-৮০)আল্লাহ তায়ালার দরবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে শয়তানের প্রধান কাজ হলো মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং বিপথগামী করা। মানুষকে বিপথে পরিচালনা করতে শয়তান ও তার অনুসারীরা সব সময় ওত পেতে থাকে। ষড়যন্ত্রের জালে কখন কাকে আটকানো যায় সেই ফন্দি আঁটতে থাকে।অনেক সময় মানুষ না বুঝে ও নফসের ধোকায় পড়ে শয়তানের ফাঁদে পা দেয়, আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়। অথচ এর মাধ্যমে অজান্তেই নিজের বড় ক্ষতি করে ফেলে মানুষ। পরিণত হয় শয়তানের সহচরে। কোরআনে আল্লাহর স্মরণ বিমুখতাকে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরম দয়াময় আল্লাহর স্মরণে উদাসিন হয়; তিনি তার জন্য নিয়োজিত করেন এক শয়তান; অতঃপর সে হয় তার সহচর।’ -(সুরা যুখরুফ: আয়াত ৩৬)এছাড়াও আরো কিছু কাজের মাধ্যমে মানুষ নিজের ক্ষতি করে ফেলে যে কারণে তাকে শয়তানের বন্ধু ও ভাই হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যেমন বর্ণিত হয়েছে, ‘বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।’ -(সূরা বনি ইসরাইল: ২৬-২৭)