শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে অর্ধ মৃত গাছে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি

জহিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৩৫১ বার পড়া হয়েছে / ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
smart

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থিত মৃত, মৃতপ্রায়, অর্ধ মৃত, রাস্তার উপর হেলে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কারণে দিনদিন বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। রাস্তার উপর ঝুঁকে থাকা গাছের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণঘাতী দূর্ঘটনা,হচ্ছে সম্পদের ক্ষতি।মহাসড়কের লাউজনি থেকে শার্শা পর্যন্ত ৪১৭টি রেইনট্রি গাছ আছে। এই গাছগুলোর বয়স প্রায় ১৭৮ বছর। বয়সের ভারে সবগুলো গাছই এখন মৃতপ্রায়। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি গাছ ২০২০ সালের আম্ফান ঝড়ে উপড়ে পড়ে। এ ছাড়াও প্রায় ৫০টি গাছ সম্পূর্ণভাবে মরে শুকিয়ে গেছে। এই গাছের শুকনো ডাল পড়ে এবং গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গত ৫ বছরে অন্তত ১০ জন মানুষ মারা গেছে। বিভিন্ন সময় ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

প্রাণহানী ঘটেছে গবাদিপশুরও। এখনও প্রতিনিয়ত এই গাছের কারণে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়াও কমপক্ষে ১৫টি রেইনট্রি গাছ এমনভাবে রাস্তার উপর হেলে আছে যে এর নীচে দিয়ে পরিবহন বা কাভার্ড ভ্যান গেলে গাছে বেধে যায়।২০১৭ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চারলেন করার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিন্তু গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন পরিবেশবাদীরা। শোনা যায়, তারা শতবর্ষী গাছের সংখ্যার মিথ্যা তথ্য এবং গাছের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তে ফটোশপে এডিট করা ছবি দিয়ে কোর্টকে বিভ্রান্ত করেন। তখন কোর্ট ৬ মাসের জন্য গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করার কাজ শুরু করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে ২৮৮ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার দুই পাশে গাছ রেখেই সড়কের পুননির্মাণ কাজ করা হয়। নতুন রাস্তা নির্মাণের পর দুই পাশে গাছ থাকার ফলে এই মহাসড়কটি এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।এই মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বেনেয়ালি গ্রামের শাহিন আহমেদ বলেন, বেনেয়ালি গির্জার সামনে সড়কের দুই পাশে দুটি গাছ হেলে রাস্তার উপর গেটের মতো হয়ে আছে। ফলে কোনো যানবাহন তার সঠিক লেনে চলতে না পারায় বিপরিতগামী গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।ট্রাক চালক আবু বক্কার বলেন, ‘সারাদেশ গাড়ি চালিয়ে বেড়াই কিন্তু যশোর-বেনাপোল রোডের মতো রাস্তার উপর গাছ আর কোনো সড়কে দেখিনি। এই গাছের জন্য এই রোডে গাড়ি চালাতে ভয় লাগে।’বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, পৃথিবীর কোথাও মহাসড়কের উপরে গাছ নেই যেটা যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে আছে। পৃথিবী যেখানে এগিয়ে চলেছে সেখানে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরের রাস্তাটি গাছের কারণে ৬ লেন না হওয়াটা দেশের অর্থনীতির জন্য অশুভ লক্ষণ। তিনি মানুষের জান-মালের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই গাছগুলো দ্রুত অপসারণ দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই গাছগুলো জেলা পরিষদের অধীনে। তারা ইচ্ছা করলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সময়ের প্রয়োজনে গাছ কেটে রাস্তাটি ৬ লেন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, গাছ মারার বিপক্ষে হাইকোর্টের রায় আছে। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।এদিকে এই ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণ করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় জনগণ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।

আরো পড়ুন

এস এন্ড এফ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Developer Design Host BD