নেত্রকোণা এক জনবহুল নগরী। মানুষ একটু ছুটি বা অবসর পেলেই বিভিন্ন শিশু পার্কে তার সন্তান্দের নিয়ে যান প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের আশায়। এই কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক শহরের বিশাল বিশাল দালান-কোঠার মধ্য থেকে কিছুটা সময় খোলা আকাশের নিচে কাটানোর জন্য ছুটে যান সবুজের সমারহ জেলার বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ দুই উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে সিংধা ইউনিয়নের নুরুল্লাচর গ্রামে অবস্থিত ডিজনি চিলড্রেন পার্কে । তবে সবার জন্য এই শিশু পার্ক এখন অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের মধ্যে ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকেই নানান অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। আড়াল ও ছাতার নিচেই শিক্ষার্থীরা অশ্লীলতার নিরাপদ স্থান হিসেবে বেঁচে নেয়।
যেমনটা মঙ্গলবার দুপুরে ডিজনি চিলড্রেন পার্কে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের অশ্লীলতাও চোখে পড়েছে বেশ ভালোভাবে।
বর্তমানে পার্কটিকে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর মেলামেশার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে। এসব জায়গায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যেই বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের এইসব কার্যকলাপ পশ্চিমাদেরও হার মানিয়েছে।
সারাদিন সারেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অতি আধুনিক স্কুল-কলেজের প্রেমিক-প্রেমিকেরা প্রেমের নামে মিলিত হচ্ছে অনৈতিক সম্পর্কে।তরুণ-তরুণীদের প্রায়ই আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। এই অবস্থায় তাদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পাশাপাশি এসব কারণে নেত্রকোণার শিক্ষক ও অবিভারকরাও তাদের সন্তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
এলাকার লোকজন বলছে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবারই সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে দিন দিন আমাদের সমাজ ধ্বংসের দিকে যাবে এবং তরুণ-তরুণীদের জীবনে অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো বেড়েই চলবে।
পার্কে কলেজ পড়ুয়া এক জোড়া শিক্ষার্থীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে আমরা তাদের প্রেমের বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা জানায়, তারা একাধিক বার এই পার্কের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় দৈহিক মেলামেশা করেছে। এটা তাদের কাছে স্বাভাবিক বলে জানায়।
উভয়ে বলেন, বর্তমানে প্রেম ছাড়া আধুনিক জীবন ভাবাই অসম্ভব। সবাই এখন প্রেম করে তাই তারাও করছে। অশ্লীল কার্যকলাপে মগ্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে যেন কিছু মনেই হচ্ছে না। এই সমস্ত অশ্লীল কাজ সমাজের অন্তরায়। তারা এ কাজ করার জন্য একটু আড়াল ও ঝোপ বেছে নেয়। কেউ কেউ আবার প্রকাশেই একে-অপরকে চুমু খাওয়ায় মহা ব্যস্ত, একে-অপরকে ঝাপটি মেরে ধরে বসে থাকে। তাদের কাছে যেন কিছু মনেই হচ্ছে না। পাশে কেউ বসা আছে বা পাশ দিয়ে কেউ যাচ্ছে। তারা এখানে আসে শুধু অনৈতিক কাজ করার জন্যই।
অন্যদিকে যারা ছুটির দিনে বা কর্মব্যস্ত যান্ত্রিকতাকে ভুলতে এক চিলটে সবুজের সান্নিধ্য লাভে প্রাণ ভরে সতেজ অক্সিজেন গ্রহণ করতে এই স্থানে আসে কিন্তু বর্তমানে এই সমস্ত ছেলে মেয়েদের অশ্লীল কর্মকান্ড দেখে তারা আর আসছে না।
কারণ হিসেবে তারা জানায় ভদ্র পরিবারের কেউ এ পার্কে একবার যদি ভুলক্রমে প্রবেশ করে পুনরায় আর কোন দিন সেখানে যাবার নাম মুখেও পর্যন্ত নিবে না।
পার্কটিতে বিনোদন বলতে কিছুই নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পার্কগুলোতে অসংখ্য প্রেমিক-যুগলের ভীড় লেগে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা যে কর্মকান্ড করে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী বা যুবক-যুবতী। পার্ক বা উদ্যানগুলোতে সতর্কবাণী থাকলেও কার্যত এই নির্দেশনা লোক দেখানো।
উদ্যানগুলোতে ঘুরতে যাওয়া এক পরিবার বলেন, ‘সুস্থ কোন মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্যানগুলোতে ঘোরাফেরা করার কোন অবকাশ নেই। প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া, ঘন্টার পর ঘন্টা বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা, ছাতা মেলে সেটার আড়ালে আরো কত সূড়সূড়ি। চোঁখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। উক্ত পোস্টে সচেতন মহলে ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ব্যাপক ঝড় তোলে।
তারই প্রেক্ষিতে স্থানীয় এক যুবক গণমাধ্যমকর্মীদের জানায় পার্কটি তার চাচা নুরুজ্জামান সালাম শিশুদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরী করেন। কিন্তু উল্লেখিত পার্কটিতে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয় বলে তিনি জেনেছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন কিছু বললে পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
এ ব্যাপারে পার্কের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এখানে অশ্লীল কোন কাজ হয় না, যে ভিডিও টি ভাইরাল করা হয়েছে , তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। পার্কের প্রতিষ্ঠাতা নুরুজ্জামান সালাম একজন ভালো মানুষ, সংস্কৃতিমনা মানুষ।
পার্কটির প্রতিষ্ঠাতা নুরুজ্জামান সালাম এর সাথে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি তবে এ ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি, পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো আমরা৷