শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

‘চীন, রাশিয়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নির্ধারিত হয় না’

প্রকাশিত হয়েছে-

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়া, চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার চলতি সপ্তাহে রাজধানীতে বাসসের কূটনৈতিক প্রতিবেদক তানজিম আনোয়ারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক চীন, রাশিয়া ও অন্য কোনো দেশ দ্বারা নির্ধারিত হয় না।

আফরিন আরও বলেন, বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সম্পর্কে আবদ্ধ বাংলাদেশ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। যেমন, ঢাকা সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (আইপিও) প্রকাশ করেছে যার অনেক কিছুর সঙ্গে ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির (আইপিএস) অভিন্নতা রয়েছে।

এই সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যাপকভাবে দুই দেশের নথিপত্র, আমাদের স্ট্র্যাটেজি এবং আপনাদের (বাংলাদেশের) আউটলুকের মাঝে অনেক মিল পেয়েছি। আমরা উভয়ে অবকাঠামো ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছি।

বাংলাদেশ অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন নিয়ে গতমাসে আইপিও প্রকাশ করেছে সেখানে ঢাকার যে মনোভাব ফুটে উঠেছে তার সঙ্গে আইপিএসের মিল রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রও আইপিএসের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জন্যে একই মনোভাব পোষণ করছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তার এই মন্তব্যটি এসেছে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যের কয়েক মাস পর। পিটার হাস বলেছিলেন, ওয়াশিংটন দেশসমূহকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে, বিশেষ করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করে না এবং কারণ আমরা আশা করি না যে প্রতিটি দেশ আমাদের মতো চীনের একইভাবে মূল্যায়ন করবে।

হাস অবশ্য বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপ ‘উন্মুক্ত, আন্তঃসংযুক্ত সমৃদ্ধি, নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক এর জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

বাসসের সঙ্গে আলাপকালে আখতার জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুশিও কিশিদার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যৌথ বিবৃতির উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান। যৌথ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানানো হয়।

তিনি বলেন, আমি শুধু রাশিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের কথা বলতে চাই…আমরা সত্যিকার অর্থে ইতিবাচকভাবে একে স্বাগত জানাই।

মার্কিন কূটনীতিক আইপিও বিষয়ে ঢাকা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস ও বাংলাদেশের আইপিও এই দুই নথিতে প্রচুর মিল রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত ফোরাম কোয়াডের অন্যান্য সদস্য বাংলাদেশের আইপিওকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ড. এস জয়শংকর চলতি সপ্তাহে বলেছেন, বাংলাদেশের আইপিওতে আমরা সন্তুষ্ট।

আখতার বলেন, বাংলাদেশের আইপিওতে সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কোয়াড সদস্যদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ আইপিওর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেখানে বাংলাদেশের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশে শীর্ষ বিনিয়োগকারী। সুতরাং আমরা আবারও আগামী বছরগুলোতে এটিই তৈরি করতে চাই।

মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (জিএসওএমআইএ) অবশিষ্ট বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যা সরকার থেকে সরকারের মধ্যকার একটি মৌলিক চুক্তি। এটি ব্যাপক সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।

বিস্তারিত উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি (জিএসওএমআইএ) আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সই হবে।

জিএসওএমআইএ হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সরকারের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত গোপন সামরিক তথ্য সুরক্ষার একটি পারস্পরিক আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি।

আখতার বলেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে আলোচনা করে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস ইনিশিয়েটিভের (আইপিএমডিএ) অধীনে সমুদ্র এলাকায় একটি অভিন্ন পরিচালনা কার্যক্রম উন্নয়নে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে রাডার প্রযুক্তি সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অপরাধ বিরোধী এলিট বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বিচার বহির্ভূত হত্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া দেখে ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, আমরা বিচার বহির্ভূত হত্যা কমে যাওয়াকে স্বাগত জানাই…তবে, আমাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রবণতার স্থায়িত্ব, র‌্যাবের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমি বলব যে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে, নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগত পরিবর্তন দেখতে হবে।

ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং বিশেষ করে ‘কোথায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হচ্ছে’ তা নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।