জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীরা।
আজ সোমবার ( ৩১ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।তাদের এক দফা দাবি হচ্ছে- চাকরি স্থায়ীকরণ করা।
এর আগে ১৭ জুলাই থেকে টানা ১৩ দিন অবস্থান ধর্মঘট পালন করার পর গতকাল রবিবার থেকে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন কর্মচারীরা। কর্মচারীদের ভাষ্য, ১৩ দিন ধরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করার পরও প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের কার্যকর বা লিখিত আশ্বাস না পাওয়ায় তাঁরা গতকাল আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আজ সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের ফ্লোরে ত্রিপল বিছিয়ে কাঁথা-বালিশ নিয়ে অনশনে বসেছেন অর্ধশতাধিক কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে মালি পদে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারী শরিফুল ইসলাম ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের অস্থায়ী কর্মচারী মো. রায়হান কাফনের কাপড় পরে শুয়ে আছেন।
কাফনের কাপড় পরে অনশনরত শেখ হাসিনা হলের মালি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আগেও বলেছি, এখনো বলছি; হয় আমাদের চাকরি দিতে হবে, নাহলে মৃত্যু। চাকরি স্থায়ী না হলে এখানেই মৃত্যুবরণ করব। তাই কাফনের কাপড় পরে শুয়ে আছি।’ মো. রায়হান বলেন, ‘কাফনের কাপড় পরে অবস্থান নিয়েছি। যদি মারা যাই, আমাদের লাশ এই রেজিস্ট্রার অফিসের সামনেই যেন মাটি দেওয়া হয়।’
আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার প্রশাসনকে স্বারকলিপি দিয়েছেন। একই দাবিতে মানববন্ধন করা হলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার অস্থায়ী কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। সবশেষ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন তাঁরা। তখন প্রশাসন ছয় মাসের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন হল, বিভাগ ও অফিসগুলোয় নিয়োগের মৌখিক আশ্বাস দেন। তবে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও অবস্থান ধর্মঘটে বসেছিলেন তাঁরা। অবস্থান ধর্মঘটেও প্রশাসন কর্ণপাত না করায় গতকাল ( ৩০ জুলাই) থেকে তাঁরা আমরণ অনশনে বসেছেন।
কর্মচারীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪২ জন অস্থায়ী কর্মচারী আছেন। যাঁদের দৈনিক ৪০০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হয়, যা বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী খুবই স্বল্প। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
কর্মচারীরা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল এবং কিছু বিভাগে নতুন করে ৪১ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একজনকেও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।