মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

ডিএনসিসির ডেঙ্গু হাসপাতালের অর্ধেক শয্যাই খালি

ন্যাশনাল ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে /
জুলাইয়ে মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করে সরকার

সারা দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগী বেশি। ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে গত জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে সরকারি অন্যান্য হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালেও রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

আগস্ট মাসের প্রথম দিন থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। আগস্টের ১২ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৬৭৪ জন। সে কারণে রাজধানীর সরকারি অন্য হাসপাতালগুলোর মতো এ হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে। তবে, অন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হলেও ডিএনসিসি ডেঙ্গু হাসপাতালের ৫০০ শয্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখনও ফাঁকা। বর্তমানে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি আছেন ২৯৭ জনের মতো। রোগী যদি হঠাৎ বেড়েও যায়, সেজন্য আরও ৩০০ বেডের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। তখন বেড সংখ্যা হবে ৮০০টি।

শনিবার (১২ আগস্ট) ডিএনসিসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম হলেও যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।

রাজধানীর তেজগাঁও থেকে জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এসেছেন আফজাল মিয়া। ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ আসায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ৫-৬ দিন ধরে আমার জ্বর। সঙ্গে সারা শরীরে তীব্র ব্যথা। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েও শরীর ভালো না হওয়ায় ডেঙ্গু টেস্ট করি। আজ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখাই। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন।

নাখালপাড়া থেকে সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন নূপুর আক্তার। তিনি বলেন, তিন দিনের জ্বরে ছেলেটা কাহিল হয়ে গেছে। কিছুই খায় না। খেলেও বমি করে। ওষুধ খাওয়ানোর পরও জ্বর না কমায় এখানে নিয়ে আসি। ডাক্তার পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো করেছি। এখন বলে, আমার ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। ছেলেটার এখনও প্রচণ্ড জ্বর। খেতে পারছে না।

হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী ও তাদের স্বজন এবং টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই পার্শ্ববর্তী এলাকার। বিশেষ করে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, নাখাল পাড়া, ফার্মগেট, বাড্ডা, মহাখালীর মানুষ ডিএনসিসির হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪২৫ জন নতুন রোগী এখানে আসেন। তাদের মধ্যে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি হন। প্রতিদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়েন প্রায় সমপরিমাণ রোগী। এ কারণে রোগীর চাপ তেমন একটা পড়ছে না।

ডিএনসিসি হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত জ্বর-সর্দি এবং ডেঙ্গু নিয়ে ১৮২ জন রোগী ডাক্তার দেখাতে টিকিট কেটেছেন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গু পজিটিভ এবং হাসপাতালে ভর্তি উপযোগী হওয়ায় ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আগের দিন (শুক্রবার) ৩৫৭ জন রোগী টিকিট কেটে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। বৃহস্পতিবার ৪৩৭ জন রোগী টিকিট কেটে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন।

ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল এ কে এম জহিরুল হোসাইন খান বলেন, হাসপাতালটি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হওয়ার পর কিছুদিন একটু রোগীর চাপ ছিল। তবে, এখন রোগীর চাপ তুলনামূলক কম। রোগী কম থাকলেই ভালো, সবাইকে সুষ্ঠুভাবে সেবা দেওয়া যায়। রোগী বাড়লে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপটা বেড়ে যায়। এমনিতে চাহিদার চেয়ে হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি আছে।

ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেন, এই হাসপাতালটি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হলেও এখন পর্যন্ত রোগী তেমন বেশি বাড়েনি। বর্তমানে আমাদের এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়। ডিসচার্জও হয় প্রায় একই পরিমাণ।

অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে রোগী বেডের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না, অথচ এখানে রোগীর চাপ কম কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, মানুষ অসুস্থ হলে কাছের হাসপাতালে যায়। ঢাকা মেডিক্যালে সারা দেশ থেকে রোগী আসে। মুগদা হাসপাতালের আশপাশে অনেক মানুষ বাস করেন। সেসব এলাকায় আক্রান্তের হারও বেশি। এছাড়া, ডিএনসিসি হাসপাতাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কম জানে বা হাসপাতালটি কম মানুষ চিনে। সে কারণেও রোগীর সংখ্যা কম।

হাসপাতালে স্যালাইন বা ওষুধের কোনো সঙ্কট আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে স্যালাইন এবং ওষুধপত্র পর্যাপ্ত আছে। পাশাপাশি এখানে পর্যাপ্ত সিটও খালি আছে। সবমিলিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও বেশ ভালো।

প্রসঙ্গত, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৮২ হাজার ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪১ হাজার ৭০৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪০ হাজার ৮০২ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭২ হাজার ২৮৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৬ হাজার ৯৮১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ হাজার ৩০৮ জন।

আরো পড়ুন

এস এন্ড এফ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Developer Design Host BD