ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ১৪টি বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে।এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মাদারীপুর থেকে টেলিফোনে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন তাকসিম এ খান।যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ১৪টি বাড়িসহ সব অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা বলে দাবি তার। এমনকি ওই প্রতিবেদনের তথ্য শতভাগ মিথ্যা, সর্বৈব অসত্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তাকসিম এ খান বলেন, আমি তো আমেরিকার সিটিজেন। এটা আজকে থেকে না, বহু বছর ধরেই। আমি ওয়াসায় এসেছি আমেরিকা থেকে। আমার আমেরিকার নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি সবাই জানে। তবে, আমার ২টি সিটিজেনশিপ আছে।যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিমের কোনো সম্পদ নেই বলেও জানান তিনি।এমনকি আত্মীয়দের নামেও সম্পদ নেই বলে জানিয়ে তাকসিম বলেন, ওখানে তো আমার ইনকাম ট্যাক্সের হিসাবে সবই দেওয়া আছে। আমার যা আছে তার সবকিছুর হিসাব তো ওখানেই আছে।সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই স্টাইলে তো ঢাকা ওয়াসা কোনো দিন চলেনি, কোনো সরকারি সংস্থা তো চলে না। ওয়াসায় রিফর্ম করেছি। যাদের বিরুদ্ধে রিফর্ম করেছি, তারা এসব করাচ্ছে। যাদের স্বার্থে আঘাত হয়েছে, তারা এমন খবর করাচ্ছে।২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে। প্রথম নিয়োগের পর থেকে মোট ছয়বার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে তাকসিম এ খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তভার দুদকের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন ১৪টি বাড়ি। এসব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।প্রতিবেদনে বাড়ির সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর ১০০ ভাগ মিথ্যা। একটাও সত্য না। এর বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই। প্রতিবেদনে যা লিখেছে তার ১০০ ভাগ অসত্য। আমেরিকাতে আমার কোনো সম্পদ নেই। নরমাল মানুষের যেটা থাকে থাকা-খাওয়া জন্য, সেটাই আছে। এর তথ্য আমার ট্যাক্স ডিক্লেয়ারেশনেই আছে।তিনি আরও বলেন, আমার অবৈধ সম্পদের কথা বলছে, না আমার তা নেই। ১৪টা বাড়ির কথা বলছে, এটা ১০০ ভাগ মিথ্যা। তাদের প্রতিবেদনের সম্পূর্ণটা অসত্য, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।এছাড়া আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হাস্যকর। এফবিআই কি করছে, তা কি ওনাদের বলে গেছে? আর আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় কার নাম আছে, এই তথ্য কে জানে? যদি তারা গোয়েন্দাই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের তথ্য আপনি জানলেন কীভাবে? আন্তর্জাতিক গোয়েন্দাদের কাছ থেকে আপনি খবর পেয়ে গেলেন? ভালো। আমাকে কেউ কখনো কিছু বলেনি।এদিকে দুদকের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, দুদকের তদন্তের বিষয়টি নিয়োগ নিয়ে। সেটার সঙ্গে এটার (যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ থাকার) কোনো সম্পর্ক নেই। আর দুদকের তদন্ত আমার বিরুদ্ধে না, সেটা হচ্ছে বোর্ডের বিষয়ে। বোর্ডের পরিচালক নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে দুদকের প্রশ্ন আছে, সেটা থাকতেই পারে। প্রশ্নের উত্তর তারা পাবে।এদিকে এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।