দেশে এক কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আক্রান্তের অর্ধেকের বেশিই নারী। এদিকে, ১০০ নারীর মধ্যে ২৬ জনই গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি মানুষ টেরই পান না তিনি যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই রোগটিকে অবহেলা করায় অনেক সময় ব্যক্তির অন্যান্য সামান্য রোগও উঠে ভয়ানক। সেসময় অনেকে প্রাণও হারান।উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি।সম্প্রতি ডায়াবেটিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম হাসপাতাল) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস সমিতির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিকস ফেডারেশন (আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস ২০২১, ১০ম সংস্করণ) বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রসঙ্গত, আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস।ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডায়াবেটিস ৭০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশংকা রয়েছে।উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি।সম্প্রতি ডায়াবেটিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম হাসপাতাল) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস সমিতির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিকস ফেডারেশন (আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস ২০২১, ১০ম সংস্করণ) বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস।ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডায়াবেটিস ৭০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশংকা রয়েছে।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি। এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।এ অবস্থায়, যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা এবং যাদের এখনো ডায়াবেটিস হয়নি তাদেরকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন করে তোলাই এ দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। কাজেই যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এই বিষয়গুলো জানতে পারেন তাহলে তারা সচেতন হয়ে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারবেন।অন্যদিকে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব এবং নিম্নাঙ্গ বিচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে। কাজেই তারা যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে পারেন, যেমন- নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা, তাহলে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসজনিত এসব জটিলতা থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারবেন।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, সারাবিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী রোগ, যা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সেই সাথে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।তিনি বলেন, আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান ও তথ্য প্রদান করেছে, তাতে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক সাত কোটি মানুষ (প্রতি ১০ জনে এক জন) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ দশমিক তিন কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ দশমিক ৩ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ (প্রতি দুই জনে এক জন) জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত চার জনের মধ্যে তিন জনেরও বেশি লোক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করে। প্রায় দুই কোটি নারী (প্রতি ছয় জনে এক জন) গর্ভাবস্থার হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ) আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দুই তৃতীয়াংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে এবং তিন চতুর্থাংশ কর্মজীবন কালের। ১২ লাখের বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিশ্বে ৬৭ লক্ষ মানুষের ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যু হয়েছে। আর ২০২১ সালে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্যব্যয় হয় ডায়াবেটিসের কারণে।ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারিত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে এবং প্রয়োজনে পরিমাণমতো ওষুধ গ্রহণ করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে এমন পরিবার নেই, যে পরিবারে অন্তত একজন ডায়াবেটিক রোগী, অথবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন এমন মানুষ নেই। ফলে আমাদের পরিবারকে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে হলে এ বিষয়ে সচেতনতা যেমন সৃষ্টি করতে হবে, তেমনি বেশ কিছু উদ্যোগও আমাদের নিতে হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে ৪০০ কাজীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিত গর্ভধারণের ব্যাপারে নবদম্পতিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সারাদেশে স্থাপিত ৫৪টি গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা কেন্দ্র থেকে নারীরা স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।তিনি আরো বলেন, ডায়াবেটিস-সেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে আমরা ধর্মীয় নেতাদেরকেও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। অনন্য এই কর্মসূচিতে মসজিদে খুতবার মাধ্যমে এবং অন্যান্য ধর্মশালায় ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের বাণী আমরা দিতে শুরু করেছি।