ঢাকার ৪টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে স্কুলবাস সার্ভিস চালু হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন স্কুলগুলোতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই কার্যক্রম শুরু হবে। স্কুল বাস সার্ভিস চালু হলে পরিবেশ দূষণ ও যানজট কমবে। এর ফলে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার কমে যাবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে।
জানা যায়, শিগগির ডিএনসিসির আওতাধীন চিটাগং গ্রামার স্কুল, মিরপুর স্কলাসটিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালে এ বাস সার্ভিস চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসি এলাকার প্রতিটি স্কুলে বাস চালু করা হবে। এজন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর কয়েকটি বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ, সেসব স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বৈঠক করেছেন। কীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলবাস চালু করা যায় সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এখন এই বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। রূপরেখা তৈরির কাজ শেষ হলে বাস সার্ভিস প্রজেক্ট পুরোদমে চালু হবে। স্কুলবাস চালুর পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
মিরপুর স্কলাসটিকা স্কুলের অভিভাবক আলী আকবর বলেন, এখন যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসে অধিকাংশই স্কুল থেকে ১০০ গজের বাইরে থাকে। এর চেয়ে স্কুলগুলোর জন্য শিক্ষার্থী লিমিট বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। কোনো স্কুলের একই ক্লাসে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না, একই ক্লাসে ২টির বেশি শাখা থাকতে পারবে না। এতে শহরের সকল স্কুল সমান হারে শিক্ষার্থী পাবে এবং শিক্ষার গুণগত মানও উন্নত হবে। আবার দেখা যায় স্কুলের আয় বাড়ানোর অজুহাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের সামনের জায়গায় মার্কেট করে ভাড়া দেওয়া হয়, এসব মার্কেট তুলে দিয়ে জায়গাগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে।
ভিকারুননিসা স্কুলের অভিভাবক সাবিক হোসেন বলেন, বেইলি রোডে ভিকারুননিসা স্কুলের আশেপাশে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। বাস সার্ভিস চালুর পর স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে গাড়ি আসতে না দিলে বাচ্চাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে কী করে? একাধিক অভিভাবক বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এজন্য গাড়ির চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে এসএসসি পাস। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় এজন্য কঠোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ঘরে বসেই সন্তানদের পর্যবেক্ষণ করা যাবে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্কুলবাসে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে। অ্যাপের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকবে। কখন বাসে উঠল, বাস থেকে নামল, স্কুলে কখন প্রবেশ করছে সবই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই অভিভাবকেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এ ছাড়া নিয়োগ দেওয়ার আগে বাসচালক ও কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জরুরি প্রয়োজনের জন্য একটি হটলাইন নম্বর থাকবে, যেখানে অভিভাবকেরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। সব শিক্ষার্থীর বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাসের রুট নির্ধারণ করা হবে।
স্কুলবাস চালু বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় স্কুলবাস চালু হলে যানজট ব্যাপক হারে কমে যাবে। ফলে দূষণ ও কার্বন নিঃসরণও কমবে। বিষয়টি নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিক্ষকেরাও এতে একমত পোষণ করেছেন। তবে এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অনেক স্কুলে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অসংখ্য ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) একই সময়ে রাস্তায় নামে ও চলাচল করে। স্কুলবাস চালুর পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সেই বাস ব্যবহারে অভিভাবকদের বাধ্য করলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমে যাবে। ছাত্রছাত্রীরা অনেকে একসঙ্গে বাসে যাতায়াত করলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। এতে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী হবে, তাদের সক্ষমতাও বাড়বে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে কয়েকটি বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ, সেসব স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এখন একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই বাস সার্ভিস চালু হবে।