শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

জাতীয় নির্বাচনের সময়ে আইজিপির দৌড়ে যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে /

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলগুলো বেশ সরব হযে উঠেছে। উত্তাপ ছড়ছে দেশের রাজনীতি। এমনতাবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে যতখানি কৌতূহল রয়েজে তার চেয়ে বেশি কৌতূহল জন্মেছে নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হতে পারে- তা নিয়ে। এ কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কে আইজিপি হবেন তা নিয়ে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে।জানা গেছে, বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। বয়সজনিত কারণে আগামী নির্বাচনের আগেই তাকে বিদায় নিতে হবে। পরবর্তী আইজিপিই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এজন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুলিশের এ সর্বোচ্চ পদ।সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, নির্বাচনকালীন আইজিপি যিনি হবেন, তাকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে, আইন মেনে কাজ করতে হয়। পাশাপাশি তার বাহিনীতেও গ্রহণযোগ্যতা ও লিডারশিপ থাকতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা এবং মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত ফোর্সের কাছ থেকে সে কাজ আদায় করে নেওয়ার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। বাহিনীর সদস্যরা যেন আস্থায় নিতে পারেন, এমন চৌকস এবং দক্ষ কর্মকর্তা না হলে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখা কষ্টকর।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও পুলিশ সদরদপ্তরের নানা স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত আরো চার মাস দায়িত্বে থাকছেন বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। ফলে এখনই পরবর্তী আইজিপি কে হচ্ছেন তা নিয়ে দাপ্তরিক কোনো জটিলতা নেই। তবে আলোচনায় রয়েছেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের দুই ব্যাচের তিন কর্মকর্তা।

 

আলোচনায় তিন কর্মকর্তা

 

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরবর্তী আইজিপি হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন পুলিশ ক্যাডারের ১২ ব্যাচের কর্মকর্তা এস এম রুহুল আমিন, মো. কামরুল আহসান এবং ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। অতিরিক্ত আইজিপি রুহুল আমিন তার ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকারী। বর্তমানে এই কর্মকর্তা পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) চিফের দায়িত্বে রয়েছেন। কামরুল আহসান পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) পদে রয়েছেন। ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত অতিরিক্ত আইজিপিদের মধ্য থেকে একজনকে আইজিপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পুলিশের ওই তিন কর্মকর্তা নির্বাচনকালীন আইজিপি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। অবশ্য বর্তমান আইজিপিকে মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়েও রয়েছে গুঞ্জন। তবে এখন পর্যন্ত দেশে এই পদে চুক্তিভিত্তিক কোনো নিয়োগ হয়নি।সূত্রগুলো বলছে, রেওয়াজ অনুযায়ী সিনিয়র হিসেবে ১২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পরবর্তী আইজিপি নিয়োগ দেওয়ার কথা। অপেক্ষাকৃত এক ব্যাচ জুনিয়র এসবি চিফ মনিরুল ইসলাম পরবর্তী আইজিপি হতে পারেন বলে জোর আলোচনা রয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে ক্লিন ইমেজ, নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী হিসেবে তাকে সবাই চেনেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ কর্মকর্তা নানা সময়ে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে দেশের বাইরেও উগ্রবাদ দমনে যুক্ত সংস্থাগুলোর কাছে তার পরিচিতি রয়েছে।গোপালগঞ্জ জেলায় জন্ম নেওয়া মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন জেলা, মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন ছাড়াও জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে গঠিত ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রথম চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।পুলিশের আরেক চৌকস কর্মকর্তা এটিইউর অতিরিক্ত আইজিপি রুহুল আমিনের বাড়িও গোপালগঞ্জে। এর আগে তিনি পুলিশ সদরদপ্তরে বিভিন্ন বিভাগে অতিরিক্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন ছাড়াও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জ, রেল পুলিশসহ চাকরিজীবনে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ও জেলার এসপি হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন তিনি।অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসানের জন্ম চাঁদপুরের মতলবে। পুলিশের এ কর্মকর্তা এটিইউর চিফ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।বিভিন্ন সময়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করে আসছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখনো রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, তা জানতে চাইলে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকালীন ছাড়াও যে কোনো সময়ে দলীয় স্বার্থে পুলিশের কাজ করার সুযোগ নেই। মূলকথা, পুলিশের কেউ যদি দলীয় হয়, তাহলে পুলিশ বিভাগে কর্মরত থাকার অধিকার নেই। কারণ তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, দলের লোক নয়। তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে হবে। তা না হলে আমাদের কপালে আরও দুঃখ আছে।’অবশ্য মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন শ্বকে বলেন, আগের নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুলিশপ্রধানকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তা সেভাবে হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে সেই প্রভাব সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের ওপর পড়বেই। এ জন্য অবশ্যই কোনো দলের প্রতি নয়, রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিরপেক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্বাচনকালীন পুলিশপ্রধান থাকা উচিত। যদিও নানা কারণেই তারা নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারেন না।

আরো পড়ুন

এস এন্ড এফ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Developer Design Host BD