শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের কাছে যা চায় জাপান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৩৯ বার পড়া হয়েছে /

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশকে জাপানও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে চায়। এক কথায় দেশটি বাংলাদেশের কাছে উন্নতমানের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায়। একইসাথে ঢাকার সাথে সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে চায় টোকিও।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে উঠে আসবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফর উপলক্ষে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সভাতেই আলোচনা হয়- আগামী ৩০ নভেম্বর তিন দিনের সফরে জাপান যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দুই দেশের সম্পর্ক বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সম্ভাব্য সুযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর উপলক্ষে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ২৬ অক্টোবর ঢাকা আসছেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মহাপরিচালক। পর দিন দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করবেন তিনি।বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) করতে চেয়েছিল ঢাকা। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের সময় মেলাতে না পারায় বৈঠকটি করা হয়ে উঠছে না। এ কারণে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মহাপরিচালক ঢাকা আসছেন।সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে টোকিওর আগ্রহের কথা জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, জাপান প্রযুক্তিগত সমরাস্ত্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের কাছে এর আগে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো মূলত নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য বেশি প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও যৌথ বিবৃতিতে তার প্রতিফলন থাকবে। যেমন জাপানের মিতসুবিশি প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের রাডার তৈরি করে। টোকিও তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে ঢাকা সে পণ্যগুলো বাকি দেশগুলোর সাথে দাম ও মানের বিষয়টি তুলনা করে দেখবে। তারপর তা কেনার বিষয়টি আসবে।কূটনীতিকরা বলেন, মিতসুবিশির বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের পণ্য মানের দিক থেকে সেরা এবং দামও বেশি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে এত দাম দিয়ে পণ্য বাংলাদেশ কিনতে পারবে কি না, সেটিও একটি বিবেচনার বিষয় রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সমরাস্ত্র সংগ্রহ করার থেকে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ বাংলাদেশের জন্য বেশি জরুরি। তবে জাপানের সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে শুধু সামরিক সরঞ্জাম কেনাবেচা নয়, সেই সাথে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময়, যুদ্ধজাহাজের বন্ধুত্বপূর্ণ সফর, প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র যেমন সমরাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, জাপানেরও এ রকম কোনো প্রস্তাব রয়েছে কি না- জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, এখনো এ ধরনের কোনো প্রস্তাব দেশটির কাছ থেকে আসেনি। তবে বৈঠকের পর বোঝা যাবে, তারা কী ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আসে।স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহজ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের থেকে এগিয়ে জাপান। সম্প্রতি বাংলাদেশকে ২৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে ১৮ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। তাদের ঋণের সুদ খুবই কম হয়ে থাকে। সেই সাথে এ ঋণ শোধ করার জন্য কমপক্ষে ৩০ বছরের সময় পাওয়া যায়। জাপানের কাজের মান নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প সময়ের আগে সমাপ্ত করে বাংলাদেশে বিপুল অর্থ বাঁচানোর নজিরও জাপানের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে তাদের সাথে কী কী বড় প্রকল্পে কাজ করা যায়, তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপান সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৪ সালে জাপান সফর করেন তিনি। এবারের বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে টোকিও যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরে বাংলাদেশ আরো জাপানি বিনিয়োগ চাইবে। অন্যদিকে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কৌশল রূপকল্প বাস্তবায়নে ঢাকাকে পাশে চাইবে টোকিও। তবে এ কৌশলের অর্থনৈতিক বা উন্নয়নভিত্তিক উদ্যোগের বাইরে সামরিক বা অন্য কোনো উদ্যোগে অংশীদার হতে চায় না ঢাকা।

আরো পড়ুন

এস এন্ড এফ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Developer Design Host BD