মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার জামির্তা ইউনিয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা ডিজিটাল কায়দায় আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের মেম্বার ওর সিন্ডিকেটরদের বিরুদ্ধে।উল্লেখ্য,দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়।২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫৭ লক্ষ ০১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা।এরই ধারাবাহিকতায় মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার জামির্তা ইউনিয়নে ২০০ জনকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।সমাজসেবা অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মে মাসে জামির্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর কাছে বিষয়টি লিখিত আকারে দেওয়ার পর চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নে ২০০ জন বয়স্ক ব্যক্তিকে নগদ একাউন্ট এর মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা পৌঁছে দিবে বলে ইউনিয়ন পরিষদ ২০০ জন বয়স্ক ব্যক্তিকে নির্ধারণ করে। এরপর একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সকলকে নতুন সিম কার্ডে নগদ একাউন্ট খুলে দেন, প্রতি নতুন সিম কার্ড ও একাউন্টের জন্য বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ১৫০ টাকা করে। বিষয়টি এ পর্যন্ত থাকলে হয়তো ভালো হতো , কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০০ জন বয়স্ক ব্যক্তিই গত তিন মাসে সিম কার্ডটি হাতে পাননি, আবার অনেকে তিন মাস পরে হাতে পেলেও জানেন না নগদ একাউন্টের পিন কোডটি। তাহলে জনমনে প্রশ্ন এতদিন সিম কার্ড গুলো কি করা হয়েছিল যে পুরো তিন মাস সময় লাগলো বয়স্করা নগদ একাউন্টসহ সিম কার্ড টি হাতে পেতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার শাহনাজ পারভীন ও একই ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার সালমা আক্তার , রিপন সিকদার ও আক্তার নামের একজন স্কুল দপ্তরিকে দিয়ে নতুন সিমে নগদ একাউন্ট করতে বাধ্য করেন বয়স্ক ভাতা ভোগীদের, আর সেই সিম কার্ড গুলো গত তিন মাস ধরে তাদের কাছেই ছিল । এরই মধ্যে, একাউন্ট করার পর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি একাউন্টে ৬০০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী । যার খোঁজ বয়স্ক ভাতা-ভোগিরা কিছুই জানতেন না। আর এর কারণ হিসেবে জানা জায় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সিম কার্ডটি হাতে পেয়েছেন বয়স্ক ভাতা প্রত্যাশীরা। সিম হাতে পাওয়ার পরই প্রতি নগদ একাউন্টে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৫০০ টাকা করে এসে গেছে । কিন্তু প্রথমবারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে দেয়া ভাতা ভোগীদের ৬০০০ টাকা সিম কার্ড থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামির্তা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা জানান, তিনি শুনেছেন অনেকেই ৬০০০ করে টাকা পাননি ,যারা টাকা পায়নি তাদের তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য শাহনাজ মেম্বারের সাথে কথা বলতে গেলে অসৎ আচরণ করেন তিনি।উক্ত মহিলা মেম্বার বলেন, “কোনো *** (অকথ্য ভাষা) যদি বলতে পারে আমি এখানের মেরেছি তাদের ****(অকথ্য ভাষা) ভরে দেয়া হবে।” এছাড়াও তিনি আরও ১০ জন মেম্বারের জড়িত থাকার কথাটি নিশ্চিত করেন৷ এবং তিনি সংবাদকর্মীদের দেখে নেয়ার কথাটিও বলেন তার বক্তব্যে।তবে সালমা মেম্বারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে খুজে পাওয়া যায়নি।সিন্ডিকেট রিপন সিকদারের সাথে কথা বলো জানা যায় মহিলা মেম্বার শাহানাজ পারভিন ও সালমা আক্তার এ বিষয়ে সব জানেন। তিনি এ বিষয়ে সকল ধরনের দায় দায়িত্ব এড়িয়ে যান। সিন্ডিকেটের আরেকজন আক্তার হোসেন জানান, মন্ত্রণালয় থেকে একটি মাধ্যম দিয়ে এ কাজ তারা সরাসরি নিয়ে এসেছি, কিছু খরচ লাগে তাই এই সিম গুলো রাখা হয়েছিল, তবে তিনি নিজে রাখেনি মহিলা মেম্বার ও রিপন এই সিম কার্ড গুলো আটকে রেখে টাকাগুলো তুলে নিয়েছিল।তবে এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার পলাশ হোসেন জানান, প্রতিটি কাজের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি কমিটি করে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হয়।সেখান থেকে সকল কাগজপত্র ঠিক আসার পরই তাদের দেয়া নাম্বার অনুযায়ী সিম কার্ডগুলোতে টাকা পাঠানো হয়। তবে নতুন একাউন্ট করে দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় যাদের পুরাতন একাউন্ট আছে তাদের নতুন অ্যাকাউন্ট করার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি আরো জানান সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে কাজ আসে।বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবল অন্যান্য সকল ভাতা ইউনিয়ন পর্যায়ে অন্যভাবে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।জামির্তা ইউনিয়নের এমন সিন্ডিকেটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান এই বিষয়টি আমি শুনেছি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি এ বিষয়ে সমাজসেবা সেবা অধিদপ্তরকে ৭ দিনের সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।প্রতিবেদন শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’