এক একটা রং আমাদের মনে এক এক ধরনের অনুভূতির জন্ম দেয়। ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের রং থেকে জানতে পারবেন একজনের মনের হদিস। তবে এটা ঠিক, কারো ওপর রঙের প্রভাব অনেকটা ব্যক্তিগত। অর্থাৎ সব রঙের প্রভাব সবার ওপর সমান নয়।অনেক সময় এটি নির্ভর করে ব্যক্তি কোন সমাজে বা কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে তার ওপর। যেমন- ইউরোপে সাদা বিয়ের পোশাক হিসেবে প্রচলিত, আবার সেই একই পোশাক আমাদের কাছে শোকের পোশাক হিসেবে বিবেচ্য।তা হলে জেনে নিই রং ভেদে কী করে মানুষ তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রকাশ ঘটায়।
লাল: লাল রং ভীষণ প্রভাবশালী একটি রং। লাল রং প্রকাশ করে গভীর প্রেম, শক্তিময়তা ও তীব্র আবেগ। লাল রং যারা পছন্দ করেন তারা তাদের পরিবার ও প্রিয়জনের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেন। চারিত্রিকভাবে তারা ভীষণ শক্তিশালী চরিত্রের অধিকারী হন। তারা কোনোকিছুতে সহজেই ভেঙে পড়েন না।
নীল: নীল রং এক কথায় শীতলতার প্রতীক। কখনো কখনো একে প্রজ্ঞা, প্রশান্তি, সততা- এই বিষয়গুলোকেও নির্দেশ করা হয়। যারা নীল রং পছন্দ করেন তারা প্রজ্ঞাবান ও সৎ হন। জীবনের ক্ষেত্রে তারা বাস্তববাদী এবং প্রেমের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল হন।
হলুদ: এই রংটি উচ্ছলতার প্রতীক। সেইসঙ্গে এই রংটি ক্ষুধা, হতাশা ও রাগও প্রকাশ করে। এই রংটি যারা পছন্দ করেন তারা বন্ধুত্বসুলভ ও স্নেহপ্রবণ হন এবং তারা ভীষণ আমুদে ও ইতিবাচক চরিত্রের অধিকারী হন।
গোলাপী: গোলাপী রং নরম ও কোমল একটি রং। এই রংটি যারা পছন্দ করেন তারা সংবেদনশীল ও সরল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। এক নিষ্পাপ অনুভূতির দ্বারা তারা আচ্ছন্ন থাকেন। বলা হয়- এই রংটাই নারীর কমনীয়তা ও সংবেদনশীলতাকে প্রকাশ করে।কমলা: কমলা রং উদ্ভাবনক্ষমতার প্রতীক। এই রং যারা পছন্দ করেন তারা খুবই করিৎকর্মা ও সৃষ্টিশীল হয়ে থাকেন। তারা জীবনে অর্থ ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন।
সবুজ: সবুজ রং প্রকৃতির প্রতীক। যারা সবুজ রং পছন্দ করেন তারা মানসিকভাবে চিরতরুণ ও নবীন থাকেন। তারা জীবনকে প্রকৃতির এক দান বলে মানেন। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তারা নিজের চিরসবুজ মনের পরিচয় দেন। প্রেমকে তারা জীবনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
কালো: কালো রংকে অশুভ প্রতীক মনে করা হয়। তবে কালো হলো গভীরতার প্রতীক। এই রং যারা পছন্দ করেন তারা বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ ও একরোখা চরিত্রের অধিকারী হন। এ ছাড়া তারা সামাজিক বা মিশুক প্রকৃতির হন না ও নিজেকে একটু আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন। আবার অন্যদিকে বলা হয়- এই রং আভিজাত্যরও প্রতীক।
সাদা: সাদা রং শুদ্ধতা, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, সরলতা, নিরপেক্ষতা, অজ্ঞতা, শূন্যতা ও দূরত্বের প্রতীক। কোনো কোনো সংস্কৃতিতে এটিকে শোকের প্রতীক বলেও ধরা হয়। শিশুদের ব্যবহার্য অধিকাংশ সামগ্রীতে তাদের সরলতার প্রতীক হিসেবে সাদা রঙের উপস্থিতি থাকে। আবার চিকিৎসকদের সাদা রং ব্যবহার তাদের পরিচ্ছন্নতা নির্দেশ করে। সাদা রং মনকে স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়।
রং শুধু চরিত্রের ওপর নয়, আবেগ, অনুভূতি বা মনস্তত্বের ওপরও প্রভাব ফেলে। হলুদ রংকে স্নায়ু উত্তেজক ও শরীর শুদ্ধিকারক ভাবা হতো। প্রাচীন সমাজে, বিশেষ করে মিশর ও চীনে চিকিৎসার জন্য রং ব্যবহার করা হতো, যাকে আজকের যুগে ক্রোমোথেরাপি বলে। হিন্দু দার্শনিক অভিসেনা সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যে রঙের প্রভাব ব্যাখ্যা করেন।
‘দ্য ক্যানন অব মেডিসিন’ বইতে তিনি ক্রোমোথেরাপির কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে নিউরো সাইক্রিয়াটিস্ট ও আকুপাংচারিস্ট ডা. ক্রিশ্চিয়ান আগ্রাপার্ট ক্রোমোথেরাপির বিষয়টি আরও বিকশিত করেন। এই চিকিৎসায় লাল রং ব্যবহার করা হতো শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে ও শরীরকে উদ্দীপ্ত করতে। মানুষের কর্মক্ষমতার ওপর নির্দিষ্ট রঙের প্রভাব আছে বলেও গবেষণায় জানা যায়।