অবশেষে হারানোর ৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিজের বাড়ি ফিরে এসেছেন আকলিমা বেগম।গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তানি সন্তানকে নিয়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন আকলিমা বেগম। সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।এদিকে আকলিমার বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজির হয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আকলিমাকে শুভেচ্ছা জানান তারা। আকলিমাকে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা।৬৫ বছর বয়সী আকলিমা বেগম বলেন, কিভাবে তিনি পাকিস্তান পৌঁছালেন সেটি তার মনে নেই। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজ মাতৃভূমি ও পরিবারকে ফিরে পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি।আকলিমা বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে।পরিবার জানায়, বাংলাদেশে থাকাকালে স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিন সন্তানের জননী আকলিমা বেগম। ভারসাম্যহীন আকলিমা ১৯৮১ সালের কোনো একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হন। সে সময় পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তার। ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ৪১ বছর পর গত পাঁচ মাস আগে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মেলে তার। কীভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি অবশ্য কেউই বলতে পারেননি।আকলিমা এখন পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে থাকেন। সেখানে রয়েছে তার আরেক পরিবার। দ্বিতীয় সংসারে তিনি আরো দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। সেখানেই পরিবারের কাছে আকলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরিবারের সদস্যরা তার সেই ভিডিওবার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন।তাদের পোস্ট করা ভিডিওটি চোখে পড়ে আকলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকির শেখের। ভিডিওতে আকলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে, ভিডিওর আকলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন আকলিমার সাথে। অবশেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দূতাবাসের সহযোগিতায় বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।’আকলিমা বেগমের ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ জানান, ‘সেসময় আমাদের অনেক অভাব ছিল। স্বামী মারা গেলে তার বোন যেন প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কীভাবে যে পাকিস্তানে চলে গেল, তা আমরা কেউই জানি না। তবে বোনকে ফিরে পেয়ে তারা সবাই খুশি বলেও জানান।