ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যে শহিদ মিনার এক সময় তৈরি হরা হয়েছিল- এখন তা যেন ময়লার ভাগাড়! মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যেও তা পরিষ্কার করা হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো ফুল।
১৯৯৩ সালে নেত্রকোনার বারহাট্টায় কাকুরা বাজারে স্থাপন করা হয় ওই শহিদ মিনার। তিন বছর পর থেকে সেটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে শহিদ মিনারের পাশে স্থাপনা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বাজারের সমস্থ ময়লা আবর্জনা ফেলা শুরু হয় ওই শহিদ মিনারে। ফলে এটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে কাকুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুইপাশে দোকানের গলিতে থাকা পরিত্যক্ত শহিদ মিনারে রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ।
ওই বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাকুরা বাজারের চলন্তিকা ক্লাবের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এই শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। শুরুতে বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা এটিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। তিন বছর পর এটি গুরুত্ব হারায়। পরে শহিদ মিনারের দুইপাশ ঘেঁষে মাছের আড়ত ঘর তৈরি হয়। ছোট গলিতে পরে থাকে শহিদ মিনার। তখন থেকে বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল বাশার কামাল জানান, দুইপাশে মাছের দোকান ঘর তৈরি হওয়ায় শহিদ মিনারটি মানুষের চোখের আড়ালে চলে যায়। আর এখানেই মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলতে থাকে। এটি একটি শ্রদ্ধার জায়গা। এখানে এভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা ঠিক না। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি। দ্রুত শহিদ মিনারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
বাজারের ব্যবসায়ী ও পাগলী গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। শহিদ মিনারে এভাবে ময়লা আবর্জনার স্তুপ থাকা শহিদদের অমর্যাদার সামিল। শহিদ মিনারটি সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার জন্য অনেকদিন থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি কিন্তু কিছুই করা হচ্ছে না।
সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, স্থানীয় লোকজনসহ বাজার কমিটির লোকজন এ বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। আমি একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। শহিদ মিনারটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করব। পাশের কোথাও খোলা জায়গায় এটি সরিয়ে নিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হলে স্থানীয়রা এতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র স্থাপনের বিষয়ে বাজার কমিটির লোকজন আমাকে জানিয়েছিল অনেকদিন আগে। পরে কী হয়েছে আর জানা নেই। এখন জানলাম এটি সরানো হয়নি। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে শহিদ মিনার সরানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।