আশরাফ আহমেদ (নিজস্ব প্রতিবেদক):কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র ভাঙ্গনে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামের ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয় পড়েছে।ওই নদের অব্যাহত ভাঙ্গনে সাহেবের চর গ্রামের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত ১২ বছরের নদের অব্যাহত ভাঙ্গণে নদীর পাড়ের বহূ পরিবার ফসলি আবাদি জমি, ঘরবাড়ি হারা হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে । যাদের অন্যত্র আবাদী জমি রয়েছে সেখানে তারা পূনরায় গৃহ নির্মাণ করে বসবাস করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে প্রায় পঞ্চাশটি অসহায় পরিবার জায়গা জমি না থাকায় দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।বর্তমানে গ্রামটির প্রায় ৭০ভাগ পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদের গর্ভে তলিয়ে গেছে। এ গ্রামটি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরালো দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর গ্রামের দুই কিলোমিটার বিস্তৃত আবাদি জমি, বসতবাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন গাছপালা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এসময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামটি পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। বর্ষা মৌসুম এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড টিকাদারের মাধ্যমে নামে মাত্র কয়েকটি জিপিবি ব্যাগ ফেলেন। এব্যাপারে অভিযোগ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক কোন পদক্ষেপ নেননি। যারা ফলে, ইতি মধ্যে গ্রামটির প্রায় ৭০ ভাগ পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।গত বছর সাহেবের চরের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, ফলে খোলা আকাশের নিচে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। প্রাথমিক অধিদপ্তর শিক্ষার্থীদের সাময়িক ভাবে শিক্ষা দানের জন্য তিন লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন।এলাকার গৃহহীন মানুষগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে সাহেবের চর গ্রামের ঐতিহাসিক কালুশাহ মাজার, মসজিদ, কবরস্থান, বসতভিটা ও বহু ফসলি জমি। ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশি থাকায় নতুন নতুন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাহেবেরচর এলাকায় ভাঙ্গন রোধকল্পে ইতোমধ্যে ত্রিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সাহেবের চর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন জানান, ভাঙ্গনের কারনে আমার বসতভিটা কয়েকবার স্থানান্তর করতে হয়েছে। স্থানীয় আব্দুল হামিদ মাষ্টার জানান, পূর্ব পুরুষগণের কবরস্থান ও ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসিরা বলছেন, টিকাদারের গাফলতির এবং দেরী করে দীর্ঘ সময় নিয়ে বালির বস্তা ফেলার কারণে প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়। এই গ্রামটিকে পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের কবল থেকে বাঁচাতে হলে স্থায়ী বাঁধের প্রয়োজন। স্থায়ী বাঁধ না দেওয়া হলে চিরদিনের জন্য কিশোরগঞ্জের মানচিত্র থেকে এই সাহেবেরচর গ্রামটি মুছে যাবে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান,পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ ভাঙ্গন রোধের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতি মধ্যে ১৭২০ মিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য ৪৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার ডিপিবি অনুমোদন হয়েছে, অতি শীগ্রই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করা হবে।