চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আজ দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। তার ঢাকা সফরকালে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওয়াং ই ঢাকায় পৌঁছাবেন। বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। পরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী নৈশভোজে অংশ নেবেন।
ঢাকা সফরকালে আগামী রোববার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে ঢাকা-বেইজিংয়ের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ছাড়বেন। এসব বৈঠকে ঢাকা-বেইজিংয়ের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
চুক্তি ও সমঝোতার অগ্রগতি
এদিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যেসব জোট বা বলয় রয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে চীনের। সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্কও করেছে চীন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক লিউ জিনসং এক বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের জোট বা বলয় ঘিরে ঢাকাকে বেইজিংয়ের বার্তা দিতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা সংকটের পর চীনের মধ্যস্থতায় এ জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চলছে। চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে গত বছর জানুয়ারিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরাতে চায় বাংলাদেশ। আর মিয়ানমারের ওপর চীনা প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব বলেও মনে করে ঢাকা। সে কারণে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। সারা বিশ্বে জ্বালানি সংকটসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমান এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও বেইজিং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আটকে পড়া শিক্ষার্থী
কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশে এসে আটকে পড়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা এখন আর চীনে ফিরতে পারছেন না। চীনে ফিরে যাওয়ার জন্য সরকার থেকে উদ্যোগ নিতে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন। আসন্ন সফরে কী কী বিষয় আলোচনা, চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে- সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ওয়াং ই’র সফরে দিনের ব্যবধান থাকলেও ২৪ ঘণ্টারও কম সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করবেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক সহযোগিতা, দুর্যোগ প্রতিরোধ বিষয়ক সহযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে টেলিভিশন প্রোগ্রাম বিনিময় বিষয়ক সহযোগিতা ইত্যাদি।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকায় পৌঁছাবেন, তখন ড. এ কে আব্দুল মোমেন কম্বোডিয়া থেকে ঢাকার পথে থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকায় ফিরবেন। সে কারণে তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ঢাকা সফরে আসেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে এসবের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে চীনা বার্তা
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকায় আসছেন, তার মাত্র কয়েকদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। সে সময় চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে নাক না গলানোর আহ্বান জানান শি জিন পিং।