ডলার কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো হলো ডাচ-বাংলা, সাউথইস্ট, প্রাইম, সিটি, ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
বুধবার ব্যাংকগুলোর এমডিদের এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। এর আগে এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
শুধু এ ব্যাংকগুলোই নয়, আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ডলার কেনাবেচায় বেশি মুনাফা করার তথ্য মিলেছে। শিগগিরই এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা ব্যাংকের আয় হিসেবে দেখানো যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ডলার কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ মেলায় সেই ছয় ব্যাংকের এমডিদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংকে ইন্সপেকশন করা হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিরতার মধ্যেই বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শন করে ডলার কেনাবেচার তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এতে এ ছয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার কারসাজি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করার তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়, কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে এক মাসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। যার মাধ্যমে ডলারের বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হয়। ব্যাংকগুলোর এমন আচরণে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৮ আগস্ট চিঠি দিয়ে এ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে অপসারণ করে।
সূত্রগুলো বলছে, ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফার তালিকায় আছে আরও প্রায় ৯টি ব্যাংক। এসব ব্যাংককেও তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে এসব ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা ব্যাংকগুলো তাদের আয় খাতে নিতে পারবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চলমান অস্থিরতা নিয়ে সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে মুনাফার সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কিনবে, তার চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে মুনাফার এ সীমার কথা ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি মানি এক্সেচেঞ্জগুলোকে ডলার কেনাবেচায় মুনাফার সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মানি এক্সচেঞ্জগুলো যে দামে ডলার কিনবে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মানি একচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতা ও আমদানি ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে গত বছরের আগস্ট থেকে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম। নানা পদক্ষেপে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে না পেরে ক্রমশ ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়নের পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সর্বশেষ প্রতি ডলারের দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এ দামে কোথাও ডলার মিলছে না। আমদানিকারকদের এলসি নিষ্পত্তিতে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের আদায় করছে এখনো ১০৫-১০৭ টাকা। আর খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯-১১০ টাকা