মানুষের যেমন রোগ হয়, তেমনই অসুস্থ হয় অন্য প্রাণীও। কিন্তু বনের প্রাণীর রোগ সারে কীভাবে? এই বিষয়ে ব্রাজিলের বনে বসবাসরত তামারিন নামে এক বানরের ওপর গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর খুঁজে বের করেছেন কারণও।ব্রাজিলের আটলান্টিক বনে ছোট নিওট্রপিকাল এই প্রাইমেটের বসবাস। বর্তমানে প্রাণীটির অস্তিত্ব বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাইমাটোলজি এক গবেষক বলেন, তামারিনের শারীরিক এবং আচরণগত প্রতিক্রিয়াগুলো অধ্যয়নের ওপর পর্যালোচনা করে বিভক্তকরণ এবং বাসস্থানের মানের হ্রাসই এই প্রকল্পের একটি অংশ। এটি আমার পিএইচডি-র বিষয়।
তিনি জানান, আমরা পরবর্তী হরমোন বিশ্লেষণের জন্য আচরণগত তথ্য এবং মল নমুনা সংগ্রহ করতে আটলান্টিক বনের বিভিন্ন অংশে তেমারিনের কয়েকটি দলকে অনুসরণ করি। সাধারণত, ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সূর্যাস্তের একটু আগে ঘুমাতে আসার আগ পর্যন্ত আমরা তামারিনদের অনুসরণ করি।
দৈনন্দিন গবেষণায় আমরা দেখতে পাই, রজন দিয়ে আচ্ছাদিত একটি গাছের কাণ্ডে তারা শরীর ঘষছে। আমাদের ধারণা ছিল, তেমারিনগুলো নিজেদের অঞ্চল চিহ্নিত করছে। এই প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে আচরণটি খুবই সাধারণ। তবে আমাদের ধারণা পাল্টে যেতে সময় লাগেনি।
মূলত ওই দলভুক্ত তেমারিনরা সম্মিলিতভাবে রজন নির্গত হওয়া গাছের কাণ্ডের সঙ্গে শরীর ঘষছিল এবং তাদের শরীরের পশম লেপে দিচ্ছিলো। আমাদের প্রথম কাজ ছিল, তেমারিনদের এই কাজের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা এবং বাকল ও রজনের নমুনা নিয়ে গাছটির সম্পর্কে জানা।
যে পরিবার আমাদের গবেষণা কাজে সাহায্য করছিল, বাকলের নমুনাটি সংগ্রহ করার পর আমরা তাদের কাছে নিয়ে যাই। পরিচারিকা দ্রুতই ওই গাছের অদ্ভুত গন্ধটি চিনতে পারেন, যা স্থানীয়দের কাছে ক্যাব্রেউকা নামে পরিচিত।প্রকৃতপক্ষে, উৎপাদিত রজনটিতে দারুচিনি, লবঙ্গ, মধু এবং পাইনের গন্ধ রয়েছে। আমাদের বোটানিক্যাল বিশেষজ্ঞ পরে নিশ্চিত করে জানান, ক্যাব্রেউকা হলো মাইরোক্সিলন পেরুইফেরামের একটি প্রজাতি। অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে, প্রদাহ কমাতে এবং পরজীবী নিধনের জন্য এই গাছটির ওষুধ দারুণ কার্যকর।
ক্যাব্রেউকা গাছকে তেমারিনরা কী কাজে ব্যবহার করে তা জানতে আমরা ক্যাব্রেউভাসের পাদদেশে ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিই। সাও পাওলো রাজ্যের মররো ডো দিয়াবো এবং গুয়ারেই ও সান্তা মারিয়া বনের একাংশে আমরা ক্যামেরা বসাই।
গোপনে স্থাপন করা ক্যামেরায় দেখা যায়, আটলান্টিক বনে বসবাসকারী অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীই ক্যাব্রেউভাসের কাছে এসেছে। ১০টি ভিন্ন প্রজাতিকে এই গাছের কাণ্ড থেকে নির্গত রজন ঘষতে কিংবা চাটতে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে বেশি কিছু প্রতীকী নিওট্রপিক্যাল স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ওসিলট, কলার্ড অ্যান্টিটার, রিং-টেইলড কোটি, টায়রা, কলার্ড পেকারি এবং রেড ডাগুয়েট।
এই প্রজাতির মধ্যে অনেকের মধ্যেই প্রথমবারের মতো জুফার্মাকগনোসির মতো অনুরূপ আচরণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টেটাররা তাদের বড় নখর ব্যবহার করে বাকল ছিঁড়ে রজন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে গাছের উন্মুক্ত কাণ্ডে তাদের শরীর ঘষে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পেকারিরা একে অপরের পশমের ওপর জোড়ায় জোড়ায় এবং মাথার উপরিভাগে রজন ছড়িয়ে দেয়।
সিংহ ট্যামারিনের ক্ষেত্রে ক্যাব্রেউকা মশাবাহিত হলুদ জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক।
এভাবেই ক্যাব্রেউকা গাছ থেকে নিঃসৃত রজনের গুণাবলীতে অনেক প্রাণীই উপকৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ব্রাজিলের আটলান্টিক বনের বাসিন্দাদের জন্য ক্যাব্রেউকা সাধারণ এবং সর্বজনীন ফার্মেসির কাজ করতে পারে। যদিও রজনের এই বৈশিষ্ট্য শনাক্তের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
লেখক: ইউনিভার্সিটি ডি লিজের পিএইচডি গবেষক