রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

খাবার লবণে মিলেছে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৭৯ বার পড়া হয়েছে /

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক বহুলভাবে বাজারজাত করা ৫টি ব্র্যান্ডের খাবার লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পেরেছেন।গবেষণাটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদউজ্জামান নুর এবং পার্থ বণিক। এরই মধ্যে তাদের গবেষণার ফলাফল ‘Microplastic contamination in processed and unprocessed sea salts from a developing country and potential risk assessment’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক জার্নাল Chemosphere এ প্রকাশিত হয়েছে যার লিংক https://www.sciencedirect.com/science/article/ pii/S0045653522028880। গবেষকরা ৫টি ব্র্যান্ডের লবণের ১টি নমুনা ও কক্সবাজারে অবস্থিত ১৫টি লবণ উৎপাদনকারী খামার থেকে অপরিশোধিত ৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় তারা দেখতে পান, বাজারজাতকৃত পরিশোধিত লবণের প্রতি কেজিতে ১৫৭টি ও অপরিশোধিত লবণে ১৯৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। যেটি অন্যান্য দেশের তূলনায় ২-৩ গুণ বেশী। বেশিরভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিক ০.৫ মিলিমিটার এর নীচে, স্বচ্ছ ও তন্তুময়। রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পান, এতে ৫ ধরণের পলিমার রয়েছে। প্লাস্টিকের পলিমারগুলো মূলত পলিইথিলিন, পলিপ্রপিলিন, পলিইথিলিন টেরিপথালেট, পলিস্টাইরিন ও নাইলন প্রকৃতির। যার মধ্যে টেরেপথালেটস এর পরিমাণ বেশী।গবেষকরা জানান, দূষণ সূচক অনুযায়ী পরিশোধিত লবণ উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত যা নির্দেশ করে যে এই পলিমারগুলো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে প্রমাণিত হয় যে, লবণ পরিশোধন প্রক্রিয়ায় মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারিত হচ্ছে না, এবং এই পদ্ধতি নিয়ে আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।বর্তমানে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ গবেষকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। ফলে মানুষসহ অন্যান্য অনেক জীবদেহে এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি মাতৃদুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। জনসাধারণের ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য কোন না কোনভাবে সমুদ্রে গিয়ে জমা হয়। সময়ের সাথে এই প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রের ঢেউ, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির জারণ বিক্রিয়ার প্রভাবে, কিংবা জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে গিয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় যা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে বহুল পরিচিত। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো উপলদ্ধি করে এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ব্যাপক গবেষণা সম্পন্ন করলেও বাংলাদেশে গবেষণার সংখ্যা খুবই নগন্য।এদিকে কম উৎপাদন খরচ, ব্যবহারের সুবিধা, হালকা কিন্তু মজবুত হওয়ায় বিশ্বে নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন তৈজসপত্র থেকে শুরু করে শিল্পদ্রব্য, ফার্মাসিউটিক্যাল ও অন্যান্য উপাদান তৈরিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। শুধু ২০২১ সালেই সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৬৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের বিভিন্ন বাস্তুসংস্থানে পাওয়া যায়, এমনকি গভীর সামুদ্রিক পলি ও এভারেস্টের চূড়াতেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষণার বিষয়ে গবেষকদলের প্রধান গবেষকদলের প্রধান ড. বেলাল হোসেন বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান ও খাদ্য সুরক্ষার মারাত্মক হুমকির কারণ। মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণের বিস্তার ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশে পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা থেকে পলিব্রোমিনেটেড ডি-ফেনাইল ইথার (পিবিডিই), বিসফেনল এ, ফ্যালেটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এগুলো নানাবিধ ক্যান্সার এবং প্রজননজনিত রোগের কারণ হতে পারে। এই বিপজ্জনক পদার্থগুলি খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরে যেমন জুপ্ল্যাঙ্কটন, ঝিনুক, কৃমি, ক্রাস্টেসিয়ান, প্রবাল, মাছ এবং সামুদ্রিক পাখিতে জমা হতে পারে পরে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেহেতু প্লাস্টিক সহজ পাচ্য না, তাই প্রাণীদের ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি হয় এবং একসময় না খেয়ে মারা পড়ে। এতে বিভিন্ন প্রাণীর বিলুপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা থেকে পরিবেশে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা পরিবেশের বাস্তুসংস্থানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত করে।তিনি আরো বলেন, যেহেতু মাইক্রোপ্লাস্টিকের পুনঃচক্রায়ন খুবই দীর্ঘ বা হয় না সেহেতু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই দূষণ বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যচক্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ নিয়ে খুবই অল্প গবেষণা হয়েছে, তাই এই বিষয়ে আরো ব্যপক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। শুধু সামুদ্রিক পরিবেশেই নয়, অভ্যন্তরীণ মিঠা পানির জলাশয়েও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। উল্লেখ্য, গবেষক দলটি বাংলাদেশের প্রধান দুটি সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পলিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন এবং তাদের গবেষণার ফলাফল “Abundance and characteristics of microplastics in sediments from the world’s longest natural beach, Cox’s Bazar, Bangladesh” এবং “Microplastics in Sediment of Kuakata Beach, Bangladesh: Occurrence, Spatial Distribution, and Risk Assessment” নামক শীর্ষ আন্তর্জাতিক জার্নাল Marine Pollution Bulletin ও Frontiers in Marine Science এ প্রকাশিত হয়েছে।

আরো পড়ুন

এস এন্ড এফ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Developer Design Host BD