কোনোভাবেই যেনো স্থিতু হতে পারছে না যুক্তরাজ্য। কয়েকমাসের ব্যবধানে মেয়াদ ফুরানোর আগেই দুই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, মন্ত্রীদের বরখাস্ত ও নিয়োগে বেশ টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে দেশটি। সর্বশেষ ক্ষমতায় বসার ৪৫ দিনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লিজ ট্রাস। একইসাথে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এতে লিজের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে ঋষি সুনাক, বরিস জনসন, জেরিম হান্ট ও পেনি মর্ডান্টের নাম ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে।
ঋষি সুনাক
কর কমানো ও সরকারি খরচ ঠিক রাখার প্রতিশ্রুতিতে চলতি গ্রীষ্মে কনজার্ভেটিভস পার্টির প্রধান পদে যুক্তরাজ্যের রাজস্ব বিভাগের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পরাজিত করে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেছিলেন লিজ ট্রাস। তবে ঋষি সতর্ক করে বলেছিলেন, লিজের অতিরিক্ত ঋণের মাধ্যমের প্রস্তাব তহবিলের পরিকল্পনা বেপরোয়া এবং এটি যুক্তরাজ্যের কয়েক দশকের মধ্যে বাজারের আত্মবিশ্বাস ও মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি খারাপ করে দেবে।ঋণ নিয়ে সুনাকের সেই শঙ্কা ছয় সপ্তাহ পর দেখল যুক্তরাজ্যবাসী। তাই ট্রাস তার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন এবং কোয়াসি কিয়ার্টেংকে সরিয়ে ঋষির সহকর্মী জেরেমি হান্টকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে প্রমাণ হয় লিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে কনজার্ভেটিভস পার্টিতে তার অবস্থান বেশ শক্ত।বৃহস্পতিবারের নতুন একটি ইউগোব পুলে লিজ ট্রাসের বিকল্প হিসেবে ঋষি সুনাক বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন। তবে ঋষি একজন বিবেদসৃষ্টিকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে উৎখাতে ভূমিকা রাখায় ঋষিকে ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক পার্টির অনেক শীর্ষ সদস্য।
বরিস জনসন
মন্ত্রিসভা এবং শীর্ষ এমপিদের বিদ্রোহ, অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ঋষি সুনাকের পদত্যাগ ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিতর্কের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন। তবে বিভিন্ন শক্তিশালী ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার বেশ গুঞ্জন রয়েছে। তিনি আবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। যদিও এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি ঘটবে না বলে ধারণা করা হয়েছিল।ব্রেক্সিটের মহানায়ক বরিস জনসন এখনো কনজার্ভেটিভস পার্টির এমপি ও দলের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয় রয়েছেন। তবে বরিস ক্ষমতাকালীন তিন বছরের খারাপ পদক্ষেপ তার সম্মানকে ধূলিসাৎ করেছে।
বৃহস্পতিবারের ইউগোব পুলে ৫৮ বছর বয়সী বরিস এখনো লিজ ট্রাসের চেয়ে জনপ্রিয়। তবুও তার ব্যাপারে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোকের আপত্তি রয়েছে।পদত্যাগের পর নিজেকে তেমনভাবে রাজনীতিতে আর মেলে ধরেননি বরিস জনসন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বক্তব্য দেন। কিন্তু তার বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের বর্তমান সংকটের কথা উল্লেখ করেননি তিনি। গত গ্রীষ্মে কনজার্ভেটিভসের প্রধানের দৌড়ে ট্রাসকে বরিস সমর্থন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যদিও তার সাবেক শীর্ষ সহকারী ও সবচেয়ে বড় সমালোচক ডিমিনিক কামিঙ্কস বলছেন, ট্রাসের স্বল্পমেয়াদ এবং বিপর্যস্ত সময়ের প্রত্যাশা করছিলেন বরিস। কারণ ট্রাসের পতনের ফলে তার প্রধানমন্ত্রী পদে আসা সহজ হবে।
জেরেমি হান্ট
লিজ ট্রাস নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট দুটি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি বরিস জনসনের কাছে পরাজিত হন এবং এই বছর নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এমপিদের প্রথম ব্যালটে তিনি শেষ স্থানে ছিলেন।তবে আগের সরকারের সময় তার কিছু অকার্যকর দক্ষতা রয়েছে। সেই অভিযোগে বর্তমানে তার নেতৃত্বের লড়াইয়ের সমালোচনা করেছেন তার সহকর্মীরা।যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিষয়ে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রশ্নের জরুরি জবাব দিতে লিজ ট্রাসের পরিবর্তে গত সোমবার পেনিকে হাউস অব কমন্সে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তার অবস্থান শক্তিশালী হয়।জোরপূর্বক ব্যাখ্যা চাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ট্রাস হাউস অব কমন্সে যাননি। তিনি অভিযোগের জবাব না দিতে লুকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। তবে পেনি হাউস অব কমন্সে বেশ ভালোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেন।বৃহস্পতিবার ৪৯ বছর বয়সী পেনির একজন জ্যেষ্ঠ মিত্র জানান, তিনি গত সপ্তাহে ঋষি সুনাকের সঙ্গে একটি যৌথ বিষয়ে এগিয়ে যেতে চান। তবে ঋষি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি কোনো জুনিয়র অংশীদারকে চান না।