স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজ শুক্রবার, ৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো পালন হচ্ছে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’। গত সোমবার (৩১ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) থেকে তা কার্যকর হয়। প্রথমবারের মতো পালিত হতে যাওয়া সংবিধান দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংবিধান দিবস বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন।’প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘সংবিধান প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তীতে ৪ নভেম্বরকে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস ও সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছর ১৭ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। জনগণের মতামত সংগ্রহের জন্য মতামত আহ্বান করা হয়। সংগৃহীত মতামত থেকে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করা হয়। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রূপ অনুসরণীয় হবে।বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা বিধৃত আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সব ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।সংবিধান লেখার পর এর বাংলা ভাষারূপ পর্যালোচনার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে আহ্বায়ক, সৈয়দ আলী আহসান এবং মযহারুল ইসলামকে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার ভার দেওয়া হয়। গণপরিষদ ভবন, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, সেখানে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে সহযোগিতা করেন ব্রিটিশ আইনসভার খসড়া আইন প্রণেতা আই গাথরি। সংবিধান ছাপাতে ১৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। সংবিধান অলঙ্করণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়, যার প্রধান ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। এই কমিটির সদস্য ছিলেন শিল্পী হাশেম খান, জনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও আবুল বারক আলভী।প্রসঙ্গত, গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেল সংবিধান দিবস। এখন থেকে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ‘ক’ ক্রমিকে পালিত হবে। অর্থাৎ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে।অন্যদিকে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে দেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার আজ ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। সংবিধান গৃহীত হওয়ার সুবর্ণজয়ন্তীতে সুপ্রিমকোর্টে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।