সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের পর সরকারি কর্মকর্তাদের মনে যেমন আতঙ্ক বেড়েছে তেমনি বাংলাদেশ পুলিশেও আতঙ্ক বেড়েছে। কেননা, বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের মধ্যে যাদের নিয়ে আস্থা সংকট রয়েছে তাদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে ছেঁটে ফেলতে চায় সরকার। পুলিশে কারা এই তালিকায় আছে তা জানতে নিজেদের মধ্যে চলছে কানাকানি। সম্প্রতি পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাড়ি পাঠানোর পর তালিকায় আরো নাম রয়েছে এমন খবরে সন্দেহভাজন অনেকে গোপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তালিকার ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজখবর করছেন। সবার মনে এক অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।বাধ্যতামূলক অবসর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যারা নিয়মিত অফিস করেন না, কাজ করেন না, তাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে। দক্ষতা ও দেশপ্রেমে ঘাটতি ছিল বলেই পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (৫৭ নম্বর আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা যায়। ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হলে যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে কারণ দর্শানো ছাড়া চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারবে। তবে এর জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রায় তিন শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। এদের মধ্যে ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এই তালিকা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আছে। পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও বিষয়টি অবগত।সম্প্রতি পুলিশে বড় ধরনের কয়েকটি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা আছেন।এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও সরকারবিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব অভিযোগ সরকারের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এজন্য তাদের আমলনামা আবারো যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।সূত্র জানায়, সরকারবিরোধীদের ব্যাচ ধরে ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের ১২, ১৫, ১৭ ও ১৮তম ব্যাচ থেকে বেশি বাধ্যতামূলক অবসর হতে পারে। ১২ ও ১৫তম ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। কিন্তু ওই ব্যাচের অনেকে এখনো এসপি ও অতিরিক্ত ডিআইজি রয়েছেন। যাদের দীর্ঘদিন পদোন্নতি হয়নি, তাদের মধ্য থেকে আরো কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। যাদের মধ্যে অনেকে ১৫-১৬ বছর ধরে এসপি পদমর্যাদায় রয়েছেন। তাদের ব্যাচমেটরা পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। এছাড়া ১৭ ও ১৮তম ব্যাচে যারা পদোন্নতি পাননি, জট কমাতে তাদেরও অবসরে পাঠানো হতে পারে।পুলিশ প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের ৩৩ জন কর্মকর্তা রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে নানা সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। তারাই এখন মূলত সরকারের অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।এদিকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অবসরে পাঠানো হলে পুলিশের ক্ষেত্রে এই হিসাব ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত যেতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। সেক্ষেত্রে ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত ধরলে পুলিশে বঞ্চিত কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২২৫ জনের মতো। কিন্তু একসাথে এতো কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো সম্ভব না হলেও যারা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তারা চাকরিতে থাকতে পারবেন না বলে জানা গেছে।