স্ত্রীর জমানো টাকা ও শখের আম বাগান বিক্রি করে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানিয়ে সাড়া ফেলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আবু কাউসার মিন্টু। আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন জানাতেই তার এ উদ্যোগ। দীর্ঘদিন কোরিয়া থাকার সুবাদে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবেই মিন্টু ও তার স্ত্রীর যৌথ অর্থায়নে পতাকাটি তৈরি করা হয়। বিশাল এ পতাকা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় করছেন ক্রীড়ামোদীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কালনা গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে আবু কাউসার মিন্টু। ৯৮ সালে তিনি জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। সেখানে থাকার সুবাদে জীবনের প্রথম কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০০২ সালের বিশ্বকাপ খেলা দেখেন। সে সময় কোরিয়ার খেলায় মুগ্ধ হন তিনি। এর পর থেকে কোরিয়ার একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিণত হন। ২০০৬ সালে দেশে ফিরে পার্শ্ববর্তী তেজখালী গ্রামের সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। পরে স্বামীর মুখে কোরিয়ার গল্প শুনে তিনিও কোরিয়ার একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হন। ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে দুই সন্তানের জনক মিন্টু ২০১৮ সালেও ঢাকার এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারে ১ হাজার ফুট লম্বা কোরিয়ার পতাকা টানান। আসন্ন বিশ্বকাপে নিজ বাড়ি দরিয়াকান্দি ইউনিয়নের কালনা গ্রাম থেকে শ্বশুর বাড়ি তেজখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানান। পতাকাটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর সঞ্চিত টাকা ও আম বাগান বিক্রি করে তিনি এই পতাকা তৈরি করার কাজ করেন। তার তৈরি করা বিশাল পতাকা দেখে হৈ চৈ চলছে প্রায় ১০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামটিতে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে এই পতাকাটি দেখার জন্য। পতাকার সুবাদে ছোট্ট গ্রামটি এখন কোরিয়া গ্রাম নামে সবার মুখে মুখে স্থান পাচ্ছে।কোরিয়া ফেরত আবু কাউসার মিন্টুর স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন আমাদের বিয়ে হয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর থেকেই আমার স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়েছেন। তারপর থেকে আমিও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সমর্থন করি। আমাকেও সে দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও আম বাগান বিক্রির টাকা দিয়ে এই পতাকা বানিয়ে ঝুলিয়েছে।এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন কোরিয়াতে থাকায় আবু কাউসার মিন্টু দেশটিকে ভালবাসে। কোরিয়ার খেলা হলেই তিনি বাড়িতে পতাকা ঝোলাতেন। তিনি কোনো লাভের জন্য এই পতাকাটি তৈরি করেননি। তিনি চান কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশটাকে আরো জানুক-চিনুক। বাংলাদেশের সাথে কোরিয়া সম্পর্ক আরো সুসংগঠিত হোক।খেলাধুলার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা মিন্টু।আবু কাউসার মিন্টু বলেন, প্রথম যখন বিশ্বকাপ দেখেছিলাম, তখন দক্ষিণ কোরিয়া দলের আঞ্জুয়ান নামের এক খেলোয়াড় দুর্দান্ত খেলেছিল। এরপর থেকেই মূলত আমি দলটির ভক্ত হয়ে যাই। প্রবাস থেকে ফিরলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আমার ভালবাসা কমেনি। গত বিশ্বকাপেও আমি রাজধানীর বিমান বন্দর এলাকায় ওভার ব্রিজে একহাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা ঝুলিয়েছিলাম। কিন্তু এতে আমার মন ভরেনি। আমি চাই আমার এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালভাবে জানুক এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক।