বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করতে চায় কানাডা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রাথমিক আলোচনাও শুরু করেছে দেশটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে বৈঠক করে কানাডার একটি প্রতিনিধিদল। এ দলে ঢাকার হাইকমিশনের দুই কূটনীতিকসহ দেশটির অভিবাসন বিভাগের দুই কর্মকর্তা ছিলেন। দলটি রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের অভিবাসন আইন ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচনা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ঠিক কতজন রোহিঙ্গা কানাডা নেবে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি। তবে তারা ধাপে ধাপে নেবে। তিনি বলেন, প্রথমে ২০ বা ৩০ জন রোহিঙ্গাকে নেওয়ার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া এবং সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে চায় তারা। পরে দ্বিতীয় ধাপে আরো কিছু নেবে। তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে যেসব রোহিঙ্গা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, দেখে দেখে তাদেরই নেবে কানাডা।প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের ২৫ সদস্যকে দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে কানাডায় নেওয়া হয়। সর্বশেষ এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ওই পরিবারের ১৪ সদস্য কানাডা পাড়ি জমান। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিব উল্লাহ খুন হন।জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পারিবারিক পুনর্মিলনের নামে ৫০০ থেকে ৬০০ রোহিঙ্গা কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে।সূত্র জানায়, ঠিক কতজন রোহিঙ্গাকে দেশটি নিতে চায়, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি দেশটির পক্ষ থেকে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই কিছু পরিবারকে নিতে চায় বলে জানিয়েছে টরন্টো।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কানাডার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাথেও বৈঠক করেছেন।ওই কর্মকর্তা বলেন, খুব বেশি রোহিঙ্গা হয়তো তারা নেবে না। তবে নেওয়া শুরু করলে এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ায় চলে যাবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংকটে এটি হয়তো খুব সামান্য প্রভাব ফেলবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, কানাডার মতো দেশ রোহিঙ্গা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এই সমস্যার একটিই সমাধান দেখি। সেটি হলো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। আর এ লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে কানাডা নিয়ে যাচ্ছে বলে আরও রোহিঙ্গা যাতে এ দেশে না আসে, সে দিকটিও খেয়াল রাখা হবে।উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে শুরু হওয়া সেনা অভিযানের পরের পাঁচ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই আছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। এখন পুরনো ও নতুন মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।