আগামী বুধবার (২৩ নভেম্বর) ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোটের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। এ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসার কথা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলো ঢাকা। তবে শেষ মুহূর্তে জানা গেলো, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন না। গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) মস্কোর তরফ থেকে ল্যাভরভের সফর বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে জানানো হয়। তবে সফর বাতিলের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ মস্কো জানায়নি। গতকাল রবিবার (২০ নভেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আইওআরএর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসছেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া গত শুক্রবার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, সের্গেই ল্যাভরভের পরিবর্তে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি আইওআরএ বৈঠকে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফর বাতিলের বিষয়ে সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে দরকষাকষি চলছে রাশিয়ার। অর্থাৎ যুদ্ধ কেন্দ্রিক ব্যস্ততার কারণে হয়তো সফর বাতিল হতে পারে। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নিজেও ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বাড়ায় শিডিউল জটিলতায় সফরটি বাতিল হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারি তারা খুবই ব্যস্ত। যুদ্ধের কারণে তাদের কর্মকাণ্ড অনেক বেড়ে গেছে। হয়তো সে কারণে তিনি আসতে পারছেন না।ইন্ডিয়ান ওশান রিম বিজনেস ফোরাম লিডারশিপ সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি আসছেন না, এটা আমি শুনেছি। তারা শিডিউল মেলাতে পারছেন না। তিনি আজারবাইজান না কোথায় যেন যাবেন, তবে আজ সোমবার তার সাথে আমার কথা হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। যুদ্ধের প্রশ্নে বাংলাদেশ স্বাধীন এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি আগেই গণমাধ্যমকে বলেছেন, আজ বা আগামীকাল দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হতে পারে।সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ২৩ নভেম্বর বিকালে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসার কথা ছিল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। বাংলাদেশ সফরের শুরুর দিনেই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের কথাও ছিল ল্যাভরভের।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন, ঢাকায় আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দিয়ে রাশিয়ার বন্ধু খুঁজবেন ল্যাভরভ। কারণ এই সম্মেলনে ১৪ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতি ল্যাভরভ এই অঞ্চলের আরো কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নোট ভারভালের মাধ্যমে ঢাকায় কয়েকটি বৈঠকসহ কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছে মস্কো। তাতে সায় দিয়েছে ঢাকা। তবে তিনি না আসায় সবকিছুই এখন পাল্টে গেছে।উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান ওশান রিম এসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হবে আগামী ২৪ নভেম্বর। এর আগে ২২-২৩ নভেম্বর আইওআরএর সিনিয়র অফিসিয়্যাল মিটিং হবে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন হল একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা যার লক্ষ্য ২৩টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ১০ সংলাপ অংশীদারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়ন জোরদার করা। আইওআরএর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কমোরোস, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, ওমান, সেশেলস, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। রাশিয়া ছাড়াও আরো ৯টি ডায়ালগ পার্টনার রয়েছে। সম্মেলনে সব সদস্য রাষ্ট্র এবং ডায়ালগ পার্টনার যোগ দিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে হোস্ট এবং সম্মেলনের চেয়ার বাংলাদেশ।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আইওআরএর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মূলত রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে মস্কো। ২৩টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত আইওআরএতে যুক্ততার বিষয়ে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই গুরুত্বপূর্ণ সফর মাত্র তিন দিন আগে বাতিল হওয়া বাংলাদেশের জন্য কোনো ভালো ইঙ্গিত বহন করে না বলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন। তারা লিখেছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী না আসাতে বরঞ্চ বাংলাদেশের সুবিধাই হল। ভূরাজনীতির অনেক বিতর্ক থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পেতে পারে।