আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না, এগুলো বন্ধ করুন। আজ শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সহায়তায় করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও মোকাবিলা করব। গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে।তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে একটা বাধা করোনা, অপরটি যুদ্ধ। এই জন্য আমার আহ্বান আমরা যুদ্ধ চাইনা। যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না, এগুলো বন্ধ করুন। সকল দেশ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে তার চলার অধিকার আছে। এটা সকল দেশের থাকতে হবে।তিনি বলেন, যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে। যুদ্ধের ভয়াবহতা কি- তা আমরা জানি। একাত্তর সালে বন্দিখানায় ছিলাম। আমার প্রথম সন্তান সে ওই বন্দিখানায় জন্ম নিয়েছিল। যুদ্ধের সময় সবথেকে মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এজন্য যুদ্ধ চাই না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে আহ্বান করব ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদেরকে উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন। আমরা শান্তি চাই। কোভিডের অভিঘাত থেকে কেবল-ই আমরা বেরিয়ে আসছিলাম। এখন এই স্যাংশন সকল অগ্রযাত্রাকে নষ্ট করছে।পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি চার চারবারের প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করতো, তাহলে দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না।তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি, মানুষের জন্য করতে এসেছি। একারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে হিসেবে এটা মেনে নিতে পারি না।নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে আগে অনেকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ, অনেক দিক নির্দেশনা, অনেক কিছুই শুনতে হতো।তিনি বলেন, আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। এটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন হয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল।তিনি বলেন, কারো ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। এ দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল। এর পরে ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশটাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুতের উৎপাদন-স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করেছিলাম, রাস্তাঘাট-যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অনেক কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম।তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১-এ আমরা সরকারে আসতে পারিনি। কেন পারিনি অনেকবার বলেছি, আর বলতে চাই না; বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না, কারো হাতে তুলে দেবো না। আমার এই প্রতিজ্ঞাই ছিল। হয়তো সে কারণে আমরা আবার আসতে পারিনি। তাতে আমার কোনো আপসোস নেই।শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১-এ যারা ক্ষমতায় এসেছিল…হত্যা, খুন, লুটপাট, দুর্নীতি, বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা, এ রকম অনেক খেলাই এ দেশের মানুষ দেখেছে। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা করে নির্বাচনে কারচুপি করে যে চক্রান্ত করেছিল সেই চক্রান্ত এ দেশের জনগণ সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়ে…তার পরে অবশ্য ইমার্জেন্সি আসে, গ্রেপ্তার করে। ২০০৮-এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট করে আমরা জয় লাভ করি, বলেন তিনি।তিনি বলেন, ২০০৮-এ জয় লাভ করে ২০০৯-এ সরকার গঠন করেছি, আজকে ২০২২। পরপর ৩ বার ক্ষমতায়। আর ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। যেখানে বাংলাদেশের বাজেট হতো মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার। এই ২০২২-২৩ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ বাজেট দিয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।বক্তব্যের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের জন্য। আমাদের এই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নতুন কমিটি গঠন হবে। তার জন্য নির্বাচন কমিশনও আমরা গঠন করেছি। সেই নির্বাচন কমিশন বসবে এবং নাম প্রস্তাব হবে এবং সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে।মুখে হাসি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ থেকে আমাদের বিদায়, নতুন নেতৃত্ব আসুক সেটাই আমি চাই।